মাসিক সমস্যা ও সমাধান

চকলেট সিস্ট

চকলেট সিস্ট হলে গর্ভধারণে সমস্যা হয়?

বর্তমানে শতকরা ৮-১৮%  নারীরা বিভিন্ন সিস্টের সমস্যার ভোগে থাকেন। এর মধ্যে খুব কমন এক ধরনের সিস্ট হচ্ছে চকলেট সিস্ট। মেয়েদের মাসিকের সময় পেটে ব্যথা, বন্ধ্যাত্বের সমস্যার অনেক গুলো কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে এন্ডোমেট্রিওসিস বা চকলেট সিস্ট । তো আজকে আমরা জানবো, চকলেট সিস্ট কি? কেন হয়? এর লক্ষণ ও চিকিৎসা কি? এবং এই সিস্ট হলে পরবর্তীতে বাচ্চা নিতে কোন সমস্যা হয় কিনা? চকলেট সিস্ট কি ? চকলেট সিস্ট বুঝার আগের আমাদেরকে কিছু বেসিক বিষয় বুঝতে হবে। ছবিটি লক্ষ্য করুন এটি মেয়েদের প্রজনন তন্ত্রের একটি ছবি। জরায়ুর ভেতরের অংশের না এন্ডোমেট্রিয়াম (Endometrium). সাধারণত মাসিকের সময় বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তনের ফলে এন্ডোমেট্রিয়াম পচে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয় এবং যোনি পথে বের হয় যাকে আমরা মাসিক বলে থাকি। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে এন্ডোমেট্রিয়াম এর কোষ গুলো জরায়ু ছাড়াও, জরায়ুর বাহিরে অংশ যেমন ওভারি,  ফেলোফিয়ান টিউব, মূত্রথলী অর্থাৎ পেটের যেকোনো অংশে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। মাসিকের সময় হরমোনের পরিবর্তনের ফলে এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ গুলো  জরায়ু এবং জরায়ুর বাহিরে যেখানেই থাকে সবজায়গায় থেকে রক্ত ক্ষরণ হয়। এই অবস্থাকে এন্ডোমেট্রিওসিস (endometriosis) বলা হয়। কোনো কারণে যদি এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ গুলো মেয়েদের ওভারি বা ডিম্বাশয়ে থাকে তখন মাসিকে হলে ওভারি বা ডিম্বাশয়ের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়। জরায়ুর ভেতরের রক্ত সাধারণত যোনি পথে বের হতে পারে, কিন্তু ডিম্বাশয়ের ভেতরে রক্তক্ষরণ হলে বের হতে পারে না, ফলে সেখানে রক্ত জমা হয়ে একটা সিস্ট তৈরি হয়। যাকে ovarian endometrioma বলা হয়।  এই সিস্টের রঙের অনেকটা চকোলেটের মতো হয় বলেই Ovarian endometrioma কে চকলেট সিস্ট বলা হয়। একদম সহজ ভাষায় বললে, মাসিকের রক্ত ওভারি বা ডিম্বাশয়ে জমা হয়ে যখন সিস্ট তৈরি করে, সেই সিস্টকে চকলেট সিস্ট (chocolate cyst) বলা হয়। চকলেট সিস্ট কেন হয়? চকলেট সিস্ট বা ovarian endometrioma মূলত এন্ডোমেট্রিওসিস এর একটা অংশ। এন্ডোমেট্রিওসিস এ আক্রান্ত শতকরা ১৮-৪৪% নারীদের  এই সিস্ট হয়ে থাকে। এর সুনির্দিষ্ট কোন কারণ এখনো চিকিৎসা বিজ্ঞানে অজানা। তবে কিছু সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। যেমন ১) Retrograde Menstruation: যখন মাসিক হয় তখন মাসিকের রক্ত যোনি পথে দিয়ে বের হয়ে যায়, কিন্তু মাসিকের রক্ত যদি ডিম্বাশয় বলা অন্য কোথায় চলে যায় তখন তাকে Retrograde menstruation বলে। অর্থাৎ মাসিকের রক্ত উলটো পথে চলে যায়। মাসিকের রক্ত ওভারি বা ডিম্বাশয়ে জমা হয়ে সিস্ট তৈরি করে। ২) এন্ডোমেট্রিয়াল সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন: কিছু গবেষক বিশ্বাস করেন যে, মাসিকের সময় এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ গুলো রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে পেটের অন্যান্য অংশে পৌঁছে যায় এবং সেখানে বৃদ্ধি পায়। মাসিকের সময় বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তনের ফলে সেই কোষ গুলো থেকে রক্তক্ষরণ হয় এবং সিস্ট তৈরি হয়। ৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: শরীরে রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে মাসিকের সময় রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে যে এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ গুলো পেটের অন্যান্য অংশে পৌঁছে যায় , সেগুলো ধ্বংস করতে পারে না। তখন এধরনের সিস্ট হতে পারে। ৪) বংশগত: এছাড়া কিছু বংশগত কারণে হতে পারে। পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে । চকলেট সিস্টের লক্ষণ চকলেট সিস্টের লক্ষণগুলো ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যায়: ১) পেটে ব্যথাঃ এর সবচেয়ে কমন লক্ষণ হচ্ছে ব্যথা। মাসিকের সময় পেটে ব্যথা হতে পারে, সহবাসের সময় ব্যথা হতে পারে, প্রস্রাব পায়খানার সময় ব্যথা হতে পারে, ২) বারবার প্রস্রাবের বেগ হতে পারে। ৩) কোমড়ে ব্যথা হতে পারে। ৪) বমি ভাব বা বমি হতে পারে। ৫) মাসিকের সময় অতিরিক্ত ও অনিয়মিত রক্তপাত হতে পারে। ৬) এই সিস্টের কারণে ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, ফলে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে চকলেট সিস্ট হলেও কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়না। চকলেট সিস্ট বুঝার জন্যে কি কি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়? চকলেট সিস্ট নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো করে নিশ্চিত হওয়া যায় । ১) আল্ট্রাসাউন্ড: সাধারণত পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা TVS (Transvaginal Sonography) করে সিস্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায় । এটি একটি সাধারণ এবং প্রাথমিক পরীক্ষা। ২) এমআরআই: যদি আল্ট্রাসাউন্ড থেকে পরিষ্কারভাবে সিস্ট নির্ণয় করা না যায়, তবে এমআরআই (MRI) বা CT Scan করে সিস্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। ৩) ল্যাপারোস্কোপি: এটি একটি সার্জিকাল পদ্ধতি, যা সরাসরি অপারেশন করে দেখতে সাহায্য করে যে ডিম্বাশয়ে সিস্ট রয়েছে কিনা। তবে এটি ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য হওয়া সচরাচর করা হয়না। চকলেট সিস্টের চিকিৎসা চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর বয়স, সিস্টের আকার-আকৃতি, অবস্থান , সিস্ট  কি একপাশে নাকি উভয় ডিম্বাশয়ে, রোগীর কোন সন্তান আছে কিনা, বা এখন বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন কিনা, এবং রোগীর উপসর্গের উপর। এই সবগুলো বিষয় বিচার বিবেচনা করে চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হয়। সাধারণত দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে ১) মেডিক্যাল টিট্রমেন্ট ২) সার্জিক্যাল টিট্রমেন্ট ১) মেডিক্যাল টিট্রমেন্টঃ যদি সিস্টের আকার ৩ সে:মি এর ছোট হয় এবং অন্য কোন লক্ষণ না থাকে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ কিছুটা সময় নিবেন। সাধারণত জন্মনিয়ন্ত্রন পিল দিবেন সাথে ব্যথা নাশক ঔষধ দিবেন। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ওভুলেশন হতে দিবে না ফলে সিস্ট বড় হতে পারবে না এবং ব্যথাও কমে আসবে। তবে এটা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। ২) সার্জিক্যাল টিট্রমেন্টঃ যদি সিস্টের আকার ৪ সে:মি বা তার চেয়ে বড় হয় এবং অনেক বেশি ব্যথা থাকে সেক্ষেত্রে অপারেশন করতে হয়। যাকে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি বলা হয়। তবে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করার পূর্বে আরো কিছু টেস্ট করার প্রয়োজন হয়, যেমন AMH (Anti-Mullerian Hormone) ও TVS (Transvaginal Sonography)। এই দুইটি টেস্ট করে বুঝা যায় একজন মায়ের সন্তান জন্মদানের জন্যে ডিম্বাণুর পরিমাণ কেমন রয়েছে।যেহেতু সিস্ট ডিম্বাশয়ে হয়, এবং সেখানে অপারেশন করলে ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেজন্য অপারেশন করার পূর্বে এধরনের টেস্ট করা হয়। দুঃখজনক বিষয় হলো, অপারেশন করলেও পরবর্তীতে আবার চকলেট সিস্ট হতে পারে। কারণ অপারেশন করে সিস্ট রিমুভ করা যায় কিন্তু সেখানে থাকে এন্ডোমেট্রিয়াম কোষ গুলোকে পুরোপুরি রিমুভ করা সম্ভব নাও হতে পারে। তখন আবার এই সিস্ট হতে পারে। সুতরাং  অপারেশন ও ১০০% স্থায়ী কোন সমাধান নয়। তবে যদি রোগীর অসহ্য ব্যথা থাকে সেক্ষেত্রে ব্যথার কথা চিন্তা করে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে রোগীর অবস্থার উপর। চকলেট সিস্টের স্থায়ী সমাধান কি? ১) মনোপোজ: মাধারণত মেয়েদের ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, মাসিক বন্ধ হওয়াকে মনোপোজ বলে। মনোপোজ এর সময় এটি এমনি ঠিক হয়ে যায়। যেহেতু মাসিকের রক্ত ডিম্বাশয়ে জমা হয়ে সিস্ট তৈরি হয় তাই মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত ডিম্বাশয়ে জমা হবে না। তখন এটি নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। ২) ডিম্বগ্রন্থিচ্ছেদন বা ওফোরেক্টমি:  অপারেশন করে ডিম্বাশয় কেটে ফেললে চকলেট সিস্ট স্থায়ী ভাবে ঠিক হয়। কিন্তু সমস্যা হলো যে নারীর ডিম্বাশয় কেটে ফেলা হবে, সে নারীর পক্ষে আর কোনদিনই  স্বাভাবিক গর্ভধারণ সম্ভব হবে না। এছাড়া ডিম্বাশয় মেয়ের বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই সবার বেলায় ডিম্বগ্রন্থিচ্ছেদন বা ওফোরেক্টমি করা যায় না। এধরনের অপারেশনের পূর্বে রোগীর বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চকলেট

চকলেট সিস্ট হলে গর্ভধারণে সমস্যা হয়? Read More »

পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা

পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা দ্রুত কমানোর উপায়।

বয়সন্ধি কালে পিরিয়ড শুরুর মাধ্যমে একজন নারী তার জীবনের পূর্ণতা লাভ করে থাকেন। সে হিসেবে প্রতিমাসে মেয়েদের মাসিক হওয়া প্রকৃতগত ভাবেই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু অধিকাংশ মেয়েরাই পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা ভোগে থাকেন । এছাড়া অনেকই বলতে শোনা যায় মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা হলে বাচ্চা নিতে সমস্যা হয়। এই বিষয় গুলো মেয়েরা কারো সাথে সেয়ার করতে পারে না এমন কি নিজের পরিবার কিংবা বন্ধু মহলেও না। আশেপাশের এসব কুসংস্কার শুনে তারা মানসিক ভাবে ডিপ্রেশন চলে আসে। তো আজকে এই বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। মাসিকের সময় রক্তক্ষরণ কেন হয়? মেয়েদের প্রজনন তন্ত্রের অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে জরায়ু বা uterus. মেয়েদের জরায়ু গঠিত হয় তিনটি স্তর দ্বারা। ভেতরের যে স্তর থাকে তার নাম এন্ডোমেট্রিয়াম (endometrium). মাসিকের সময় বিভিন্ন হরমোনের (ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন) তারমধ্যের ফলে জরায়ুর ভেতরে অংশ অথাৎ এন্ডোমেট্রিয়াম necrosis বা পচে গিয়েই মূলত রক্তক্ষরণ হয় যাকে আমরা মাসিক বলে থাকি। পিরিয়ডের সময় ব্যাথা কেন হয়? হরমোনের তারমধ্যের ফলে জরায়ুর ভেতরে অংশ এন্ডোমেট্রিয়াম যখন পচে যাওয়া শুরু হয়, তখন এন্ডোমেট্রিয়ামের পচে যাওয়া অংশগুলোকে জরায়ু থেকে বের করার জন্য জরায়ুতে এক ধরনের সংকোচন শুরু হয়। এই সংকোচন থেকেই মূলত মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা হয়। এছাড়া মাসিকের সময় শরীরে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক আরেক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। এই প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন জরায়ুর দেয়ালের সংকোচন আরও তীব্র করে। ফলে ব্যথার তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। তবে সবার মাসিকের সময় ব্যাথা হয় না আবার হলেও ব্যাথা ধরন এক হয় না। কারন মাসিকের সময় সবার জরায়ুতে সংকোচন এবং শরীরে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নিঃসৃত হওয়ার পরিমান সমান নয়। কেন সমান নয় এই উত্তর এখনো অজানা। মেয়েদের মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা হওয়াকে মেডিক্যালের ভাষায় বলা হয় Dysmenorrhea. মাসিকের সময় মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা হওয়াকে সাধারনত দুই ভাগে ভাগ করা যায়, ১) প্রাথমিক কারন (Primary Dysmenorrhea) ২) রোগ জনিত কারন (Secondary Dysmenorrhea) ১) প্রাথমিক কারনঃ- মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা যদি কোন রোগের কারন ছাড়াই হয় সাধারণত তাকে primary dysmenorrhea বলা হয়। এটি খবুই কমন, বিশেষ অবিবাহিত মেয়েদের। এখন প্রশ্ন হলো প্রাইমারি dysmenorrhea বুঝার উপায় কি? অধিকাংশ ক্ষেত্রে Primary dysmenorrhea এর কোন নির্দিষ্ট কোন কারন থাকে না । তবে এর কিছু লক্ষণ দেখে বুঝায় যায়। যেমন ক) এটি সাধারনত বংশগত কারনে বেশি হয়, অনেক সময় ভোক্তভূগীর ইতিহাস শুনলে দেখা যাবে তার মা অথবা বোনদের বা পরিবারের কারো মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা ছিলো। খ) বয়সঃ ১৩-১৪ বছর বয়সে মেয়েদের মাসিক শুরু হয়, primary dysmenorrhea সাধারণত মাসিক শুরু থেকেই দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে অবিবাহিত (১৩-১৮ বয়সী) মেয়েদের বেশি হয়। গ) অধিকাংশ সময় এটি দুঃচিন্তার কারনে হয়ে থাকে, বিশেষ করে পরিক্ষার আগে বা কোন কিছু নিয়ে মেয়েরা যদি ডিপ্রেশনে থাকে তাহলে মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা তুলনামূলক বেশি হতে পারে। ঘ) এন্ডোমেট্রিয়াম necrosis বা পচে যাওয়ার কারনে সাধারনত মাসিকের সময় হালকা পেটে ব্যাথা কম বেশি সবার হতে পারে। তবে যদি এমন মনে হয় যে এটি আগের চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে এবং ব্যাথার কারনে আপনার স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে কষ্ট হচ্ছে তাহলে হতে পারে এটি Primary dysmenorrhea. ঙ) ব্যাথার ধরন: মাসিকের শুরুর দিকে ব্যাথা বেশি থাকে এবং ব্লিডিং বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাথা কমে আসে। চ) ব্যাথা সাধারনত পেটের নিচের অংশে শুরু হয় এবং অনেক সময় কোমড় এবং দু’পায়ের উরুর দিকে যেতে পারে। ২) রোগ জনিত কারনঃ- মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা যদি কোন রোগের কারনে হয় সাধারণত তাকে secondary dysmenorrhea বলা হয়। এটি বিবাহিত মেয়েদের বেশি হয়। বিশেষ করে যাদের বয়স ৩০ বছর বা তার চেয়ে বেশি। অথবা যদি এমন হয় পূর্বে কখনো আপনার মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা ছিল না, হঠাৎ করে মাসিকের সাথে ব্যাথা শুরু হয়েছে তাহলে হতে পারে এটি Secondary Dysmenorrhea । Secondary Dysmenorrhea সাধারণ কোন রোগের কারনে হয়, যেমন এন্ডোমেট্রিয়োসিস (Endometriosis) জরায়ুতে টিউমার, জরায়ুতে কোন পলিপ, যেকোন ইনফেকশন বা PID (Pelvic Inflammatory Disease), চকলেট সিস্ট (chocolate cyst), এছাড়া যারা জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্যে IUCD (Intra-Uterine Contraceptive Device) যেমন কপার টি (Copper-T) ব্যাবহার করে থাকেন তাদেরও কিন্তু মাসিকরে সময় ব্যাথা হতে পারে। নোট: মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা প্রাথমিক কারনে হচ্ছে নাকি কোন রোগের কারনে হচ্ছে সেটি নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই একজন গাইনি চিকিৎসকের পরার্মশ নিয়ে পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা উচিত। রোগ জনিত কারনে মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা বুঝার উপায়: পূর্বে কখনো আপনার মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা ছিল না, হঠাৎ করে মাসিকের সাথে ব্যাথা শুরু হয়েছে।  পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথার সাথে  অনিমিত পিরিয়ড হলে ।  পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথার সাথে অতিরিক্ত রক্তক্ষণ হলে। পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথার সাথে গায়ে জ্বর হলে। পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথার সাথে অস্বাভাকি স্রাব হলে। পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথার সাথে পস্রাবে জ্বালা পোড়া ও সহবাসেরর সময় ব্যাথা হলে। এই লক্ষণ গুলো যদি মাসিকের সময় পেটে ব্যাথার সাথে কারো দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে কোন রোগের কারনে পেটে ব্যাথা হচ্চে। পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা কতদিন স্থায়ী হয়: পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা সাধারণত মাসিক শুরুর আগের দিন থেকেই ব্যাথা শুরু হতে পারে এবং মাসিক চলাকালীন ১-৩ দিন পর্যন্ত ব্যাথা স্থায়ী হতে পারে। কখনো কখনো এর চেয়ে বেশি হতে পারে। অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে কোন রোগজনিত কারন না থাকলে মাসিক শুরুর কয়েক বছর পরে ব্যাথার স্থায়ীত্ত্বকাল আস্তে আস্তে কমে আসে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিয়ের পর কিংবা সন্তান প্রসবের পরে রোগজনিত কারন না থাকলে মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা হলে কি করনীয়ঃ প্রাথমিক dysmenorrhea যেহেতু কোন রোগের কারনে হয়না, এটি সাধারনত বিয়ের পরে অথবা বাচ্চা জন্মদানের পরে নিজে নিজে ভাল হয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিয়ের পর বা নরমাল ডেলিভারির পরে প্রাথমিক dysmenorrhea চিরতরে ভালো হয়ে যায়। সেজন্যে এটি নিয়ে দুঃচিন্তার কিছু নেই। তবে কিছু নির্দেশনা মেনে চললে মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা অনেক ক্ষেত্রেই কমানো সম্ভব। মাসিকের সময় পেটে ব্যাথা হলে ২ ভাবে ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করা উত্তম। ১) ঘরোয়া পদ্ধতি ২) ঔষধ সেবন করা। ১) পিরিয়ডের ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি: ক) মনোবল বৃদ্ধি করা, এবং এই সম্পর্কে তাকে সঠিক জ্ঞান নেয়া। পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথার জন্যে ভয়ের কোন কারন নেই, ১-৩ দিনের মধ্যে ব্যাথা এমনি কমে যাবে। খ) ব্যাথা অসহনীয় হলে ব্যাথা কমানোর জন্যে পেটের নিচের অংশে গরম পানির সেক দেয়া, বাজারে water heater bag পাওয়া যায় যেগুলোর দাম ১০০-২০০ টাকা। সেগুলো কিনে মাসিকের সময় গরম পানির সেক নিতে পারেন। তাতে অনেকটাই ব্যাথা কমে যাবে। এসময় কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন এতে অনেকটাই আরাম হবে (ইনশাআল্লাহ)। গ) পেটে হালকা মেসেজ করতে পারেন এতেও ব্যাথা কমে যাবে ইনশাআল্লাহ। ঘ) আদা সেবন করুন: পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা কমানোর জন্য আদার কার্যকারিতা রয়েছে। পিরিয়ডের ব্যাথা কমাতে পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগেই আদা কুচি করে এমনি এমনি খেতে

পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যাথা দ্রুত কমানোর উপায়। Read More »