প্রেগন্যান্সি টিপস

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি হয়?

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন প্রত্যেক গর্ভবতী মা এবং গর্ভের শিশুর উভয়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে হিমোগ্লোবিন না থাকলে গর্ভের সন্তানের ব্রেইন ও হাড় গঠনে সমস্যা হতে পারে। রক্তের হিমোগ্লোবিন শরীরে অক্সিজেন পরিবহণ করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে, এছাড়া বিভিন্ন মাইক্রো nutrients  পরিবহণ করে। যারা গর্ভধারণ করেছেন কিংবা বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন তাদের জন্যে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকা অত্যন্ত জরুরি। হিমোগ্লোবিন কি? আমরা জানি রক্তে ৩ ধরনের কোষ আছে ক) শ্বেত রক্ত কনিক, খ) লোহিত রক্ত কনিক, গ) অনুচক্রিকা। এই লোহিত রক্ত কনিকায় একটি উপাদান থাকে যার নাম “হিমোগ্লোবিন” সহজে বলতে গেলে “হিমোগ্লোবিন হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন যা লোহিত রক্তকণিকায় (RBC) উপস্থিত থাকে এবং শরীরের টিস্যুগুলিতে অক্সিজেন পরিবহণ করে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতির কারণেই রক্ত লাল দেখায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করার মাধ্যমে শরীরের কার্যক্রম সচল রাখতে সহায়তা করে”। রক্তের উৎপাদন লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়াকেই রক্ত স্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা বলে। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন এতে জরুরি কেন? গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন গর্ভের সন্তান এবং মা উভয়ের জন্য জরুরি। গর্ভের সন্তানের ক্ষেত্রেঃ একজন মা যখন গর্ভধারণ করেন তখন তার শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান, আয়রন এবং রক্তের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, কারণ মায়ের শরীরকে গর্ভস্থ শিশুর জন্য রক্ত তৈরি করতে হয়। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি থাকলে গর্ভের সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। যার ফলে গর্ভের সন্তানের ওজন কম হয়। এছাড়া গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থাকলে গর্ভের সন্তানের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। সন্তান হাবাগোবা হতে পারে। সন্তানের রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রেঃ গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি থাকলে , গর্ভবতী মহিলাদের প্রায়ই ক্লান্তি ও দুর্বলতার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সঠিক পরিবহণ নিশ্চিত করে, যা কোষের কার্যকারিতা ও এনার্জি স্তর ঠিক রাখার জন্য অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি থাকলে সময়ের আগে ডেলিভারি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া ডেলিভারির সময় মায়ের শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হয়, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলে ডেলিভারির সময় মায়ের জীবনও ঝুঁকি মধ্যে থাকে।  এজন্যেই গর্ভাবস্থায় মায়ে শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন থাকা জরুরি। হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রাঃ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ১৩-১৮ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের ১২-১৬ গ্রাম/ডেসিলিটার। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের জন্য হিমোগ্লোবিনের মান সাধারণত নন-প্রেগন্যান্ট মহিলাদের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা নিম্নরূপ হওয়া উচিত: গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে: ১১.০ গ্রাম/ডেসিলিটার বা এর বেশি গর্ভধারণের ৪-৬ মাসে: ১০.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার বা এর বেশি এর থেকে কম হলে একে রক্ত স্বল্পতা বলে। হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়? সাধারণত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যদি ৮ গ্রাম/ডেসিলিটার এর কম হয় তখন রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হয়। তবে গর্ভাবস্থায় রক্ত দেয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গর্ভবতী মায়ের অবস্থার অবস্থার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যায় কেন? গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে । যেমন ১) যদি রক্তক্ষরণ হয়ঃ যেহেতু লোহিত রক্ত কণিকা, হিমোগ্লোবিন রক্তেরই অংশ, তাই যেকোনো কারণেই যদি শরীর থেকে রক্ত বের হয় যায় তাহলে, শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা ও হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি হবে ফলে রক্ত স্বল্পতা হবে। এটি হতে পারে কোন দুর্ঘটনা জনিত কারণ, পাইলস, হিমোরয়েড, কোন অপারেশন, যোনিপথে রক্তপাত এমনি মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। ২) আয়রন ঘাটতিঃ আয়রন হিমোগ্লোবিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গর্ভাবস্থায় আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায় কারণ মায়ের শরীরকে গর্ভস্থ শিশুর জন্য রক্ত তৈরি করতে হয়। তাই, আয়রনের অভাব হলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। ৩) ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি-১২ ঘাটতিঃ লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনের জন্যে ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি-১২ এর প্রয়োজন হয়। এখন শরীরে যদি ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি থাকে তাহলে রক্ত স্বল্পতা হতে পারে। ভিটামিন বি-১২ ও ফলিক অ্যাসিড আমরা সরাসরি পাই খাবার থেকে। আমরা যদি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ভিটামিন বি-১২ ও ফলিক অ্যাসিড জাতীয় কম খাই তাহলে এর ঘাটতি হতে পারে বিশেষ করে যারা vegetarian তাদের সমস্যা হতে পারে। খাওয়ার পরে আমাদের ক্ষুদ্রান্ত থেকে ভিটামিন বি-১২ ও ফলিক অ্যাসিড শোষণ হয়, এখন যদি কারো হজম জনিত সমস্যা যেমন IBS (Irritable BowelSyndrome)  থাকে তাহলে এগুলোর ঘাটতি হতে পারে। ৪) এছাড়া কৃমির সমস্যা থাকলেও শরীরে রক্ত স্বল্পতা হতে পারে। ৫) কিছু ঔষধ আছে যেগুলো শরীরে আয়রন শোষণ কমিয়ে দেয় বিশেষ করে গ্যাসের ঔষধ। যারা অতিরিক্ত গ্যাসের ঔষধ খায় তাদের কিন্তু হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হতে পারে। তো গর্ভাবস্থায় প্রায় সকল মায়েদেরই খাওয়ার অরুচি, বমি হওয়া, গ্যাসের সমস্যা বেশি হয়। যার ফলে পর্যাপ্তা আয়রন ও ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে পারে না। এছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে আয়রন চাহিদা থাকে বেশি। একদিকে আয়রনের চাহিদা বেশি অন্যদিকে খেতে না পারা, মূলত এই কারণেই গর্ভাবস্থায় কমবেশি সবার শরীরে হিমোগ্লোবিন বা রক্তের স্বল্পতা দেখা দেয়। হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণঃ ১) কিছু লক্ষণ দেখে হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি অনুমান করা যায়। যেমন সবসময় ক্লান্তি বা অবসাদ লাগা – শরীর দুর্বল অনুভব হওয়া – বুক ধড়ফড় করা – অল্পতেই শ্বাস কষ্ট হওয়া বা অল্প পরিশ্রমে হাপিয়ে যাওয়া – ত্বক ঠান্ডা হয়ে যাওয়া – মুখে ও ঠোটে ঘা হওয়া। – নখ ভঙ্গুর হওয়া – বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট হওয়া। – এছাড়া শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরিক্ষাঃ সরাসরি রক্তের পরীক্ষা যেমন CBC (Complete Blood Count) অথবা Blood for Hb% টেস্ট করে দেখা যায়। এই ২টি টেস্টের যেকোনো একটি টেস্ট করে যদি দেখেন হিমোগ্লোবিন ১১.০ গ্রাম/ডেসিলিটার বা এর বেশি তাহলে এটি স্বাভাবিক মাত্রায় রয়েছে। যদি হিমোগ্লোবিন ১১.০ গ্রাম/ডেসিলিটার এর কম থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার রক্ত স্বল্পতা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির উপায়ঃ ১) প্রথম উপায় হচ্ছে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: এমনি কিছু খাবার আছে যেগুলো আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করবে। সাধারণত লাল শাক, পালং শাক, কচু শাক, কলার মুচি, সুবজ ও রঙিন শাক সবজি থেকে আয়রন পাওয়া। অনেক সময় এগুলো নিয়মিত খাওয়ার পরেও তেমন সুফল পাওয়া যায় না। এর কারণ হলো আয়রন দুই ধরনের হয় একটি হিম আয়রন আরেকটি নন হিম আয়রন। শাক সবজি ফল মূল থেকে সাধারণ নন হিম যুক্ত আয়রন পাওয়া যায়। আমরা যখন শাক সবজি রান্না করি তখন বেশির ভাগ নন হিম আয়রন নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমাদের আয়রনের ঘাটতি থেকে যায় এবং রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়। তাই শাক সবজির পাশাপাশি ফল খাওয়া হচ্ছে বেস্ট অপশন। ফলের মধ্যে, আনার, কলা, পাকা পেঁপে, টমেটো, স্ট্রবেরি ইত্যাদি তে প্রচুর পরিমাণ আয়রন ও ভিটামিন বি১২ বিদ্যমান। অপরদিকে গরুর মাংস, খাসির মাংস, কলিজা, ডিম, সামুদ্রিক মাছ বাদাম, অর্থাৎ যেগুলো প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে হিম আয়রন থাকে যা রক্ত স্বল্পতা দুর করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। ২. ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি-১২: ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি-১২ হিমোগ্লোবিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে কিছু ফলিক

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি হয়? Read More »

গর্ভাবস্থায় পেট কখন বড় হয়

গর্ভাবস্থায় পেট কখন বড় হয়? গর্ভাবস্থায় পেট ছোট হওয়ার ৫টি কারন।

গর্ভধারনের পরে গর্ভাবস্থায় পেট কখন বড় হয় এটি জানার আগ্রহ প্রায় সকল গর্ভবতী মায়েদেরই থাকে। কারন গর্ভধারণের সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে গর্ভের সন্তানের আকার আকৃতি যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি গর্ভবতী মায়ের পেটের আকার আকৃতি ও বৃদ্ধি পায়। তবে কারো পেট আগে বড় হতে দেখা যায় কারো আবার পরে। অনেকেই মনে করে থাকেন, একসাথে গর্ভধারণ হয়েও ঐ ভাবি / আপুর তুলনায় আমার পেট অনেক ছোট কেন। অনেকেই বলে থাকেন, আমার গর্ভধারনের ৪ মাস/ ৫ মাস / ৬ মাস চলছে কিন্তু এখনো পেট দেখা যাচ্ছে না কেন? তো আজকে এই বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। গর্ভধারন করলে পেট বড় দেখায় কেন? ছবিটা লক্ষ্য করুন, এটি আমাদের কোমড়ের দুইটি হাড় সংযোগ হওয়ার ছবি। দুইটি হাড় সংযোগ হয়ে যে বৃত্তাকার অংশ তৈরি হয়েছে তাকে বলা হয় pelvic cavity বা pelvis. মেয়েদের জরায়ু সাধারণত এই pelvic cavity এর ভেতর অবস্থান করে। গর্ভধারণ হলে জরায়ুর ভেতরেই বাচ্চা বড় হতে থাকে। যেহেতু pelvic cavity তে খুব বেশি জায়গা নেই। সেজন্য গর্ভের সন্তান বড় হওয়ার সাথে সাথে জরায়ু  pelvic cavity থেকে উপরের দিকে উঠতে থাকে। উপরে উঠার সাথে সাথে পেটের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখন আমরা বুঝতে পারি পেট বড় হচ্ছে এবং গর্ভের সন্তান বড় হচ্ছে।   গর্ভাবস্থায় পেট কখন বড় হয় ? গর্ভাবস্থায় পেট কখন বড় হয় বিষয়টা জানতে হলে কিছু বেসিক বিষয় সর্ম্পকে জানতে হবে। কারন গর্ভাবস্থায় পেট কখন বড় হয় এটি বিষয়ের সাথে জড়িত। গর্ভধারণের  পুরো সময়টাকে কে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১) First trimester: গর্ভধারনের প্রথম তিন মাস বা ১৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়টাকে First trimester বলা হয়। ২) 2nd Trimester: গর্ভধারনের ৪-৬ মাস বা ১৪-২৭ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়টাকে 2nd trimester বলা হয়। ৩) 3rd Trimester: গর্ভধারনের শেষ তিন মাস বা ২৮-৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়টাকে 3rd trimester বলা হয়। মূলত গর্ভধারণের ১৬-২০ সপ্তাহ বা 2nd trimester এর গর্ভাবস্থায় পেট বড় হতে শুরু করে। তবে জরুরী নয় যে সবার একই সময়ে পেট বড় হবে। এটি একটি গড় হিসেব মাত্র। অধিকাংশ মহিলাদের এই সময়ের কিছু সপ্তাহ আগে এবং কিছু সপ্তাহ পরেও পেটে বড় হওয়া বুঝতে স্বক্ষম হয় । অনেকেই গর্ভধারণের ৭ মাস বা ২৯ সপ্তাহে পেটের আকার বড় হওয়া বুঝতে পারেন। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে গর্ভের সন্তানের আকার থাকে মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার এবং ওজন হয় মাত্র ১৫-২০ গ্রাম। যার ফলে মায়ের পেটের আকৃতিতে কোন প্রভাব ফেলে না, সেজন্য গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে পেটে বুঝা যায় না। অনেক সময় পেটে বড় হওয়ার সাথে সাথে সামান্য গর্ভাবস্থায় পেটে ও  পিঠে ব্যাথা ও হতে পারে। গর্ভাবস্থায় পেট ছোট হওয়ার কারন গর্ভবস্থায় পেট ছোট হওয়ার বেশ কিছু কারন রয়েছে, এগুলোর মধ্যে কিছু স্বাভাবিক কারন আবার কিছু রোগীর জনিত কারনেও হতে পারে। প্রথমে আমরা স্বাভাবিক কারন গুলো জেনে নিবো।  ১) প্রথম গর্ভধারণঃ সাধারণত যারা প্রথম মা হতে চলেছেন তাদের পেটে তুলনা মূলকভাবে ছোট হয় ও দেরিতে বড় হয়। আমাদের পেটে মাংসপেশি রয়েছে, এই মাংসপেশি গুলো আমাদের পেটের অভ্যন্তরের অঙ্গ গুলোকে সার্পোট দেয়। যারা প্রথম বার গর্ভধারন করে করেন তাদের পেটের মাংসপেশি গুলো শক্ত থাকে। যার ফলে জরায়ু হালকা বড় হলেও মাংসপেশিগুলোকে প্রসারিত করে সেটা বাহিরে আসতে বেশি সময় লাগে। তখন মনে হয় পেট বড় হচ্ছে না। এই কারনেই যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের ক্ষেত্রেও পেট দেরিতে বড় হয় বা কম বড় হয়। ২) বয়সঃ আপনি কত বছর বয়সে গর্ভধারন করেছেন এর উপর পেটের আকার নির্ভর করে। যারা কম বয়সে গর্ভধারন করেন তাদের পেটের মাংসপেশি গুলো শক্ত থাকে ফলে তাদের পেট দেরিতে বড় হয় এবং তুলনামূলক ছোট হয়। ৩) যদি আপনার গর্ভে ১ টি বাচ্চা থাকে তাহলে তুলনামূলক ভাবে যাদের গর্ভে জমজ বাচ্চা আছে তাদের তুলনায় ছোট হবে। ৪) সাধারণত যেসকল মায়েরা উচ্চতায় লম্বা তাদের পেট ছোট দেখায় । ৫) সাধারনত যেসকল মায়েদের ওজন কম শরীর বলা পেটে তেমন কোন চর্বি নেই তারা গর্ভবতী হলে পেট তুলনামূলক ভাবে ছোট এবং দেরিতে বড় হয়। রোগজনিত কারনঃ ১) গর্ভবস্থায় পেটে পানির পরিমাণঃ গর্ভাবস্থায় বাচ্চা একটা পানি ভর্তি ব্যাগের ভেতরে থাকে এই ব্যাগের নাম amniotic sac আর পানির নাম amniotic fluid or liquor. গর্ভবস্থায় বাচ্চাকে সবধরনের আঘাত রক্ষা করে এই পানি। গর্ভবস্থায় যদি কারো পানির পরিমান কম থাকে তাহলে পেট তুলনামূলক ভাবে ছোট দেখাবে। এই অবস্থাকে মেডিক্যালের ভাষা বলা হয় Oligohydramnios. গর্ভবস্থায় পেটে পানি কম হলে সন্তান ও মায়ের জন্যে বিপদজনক। এই রকম অবস্থাতে অবশ্যই একজন গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।  ২) বাচ্চার ওজনঃ কোন কারনে যদি গর্ভের সন্তান পরিপূর্ণ ভাবে বৃদ্ধি না হয় বা স্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি না হয় বা Overall Growth & development এ সমস্যা হয় তখন কিন্তু গর্ভবতী মায়ের পেট ছোট দেখাবে। এই অবস্থাকে IUGR (Intrauterine Growth Restriction) বলা হয়। অনেকেই গর্ভবস্থায় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেন না, ফলে বাচ্চার Development ভালো হয়না তখন পেট ছোট দেখায়। গর্ভবস্থায় পেট অতিরিক্ত বড় হওয়ার কারন ১) দ্বিতীয় বা তৃতীয় গর্ভধারন: যে সকল মেয়েরা দ্বিতীয় বা তার অধিক গর্ভধারণ অর্থাৎ প্রথম গর্ভধারণ নয় তাদের পেট তুলনামূলক ভাবে বড় হয়। কারন দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার গর্ভধারণ হলে পেটের মাংসপেশি গুলো তুলনামূলক কম শক্ত থাকে৷ কারন প্রথম গর্ভধারনের ফলে পেটের মাংসপেশি কিছুটা প্রসারিত হয়ে যায়। তখন জরায়ু হালকা বড় হলেই বাহিরের দিকে চলে আসে এবং পেটবড় মনে হয়। এই কারনেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় গর্ভধারন হলে পেট বড় হওয়া দ্রুত বুঝতে স্বক্ষম হয়। ২) বয়সঃ যারা বেশি বয়সে গর্ভধারণ করেন তাদের পেট বড় হওয়া দ্রুত বুঝতে স্বক্ষম হয় এবং তূলনামূলক বড় হয়। ৩) যাদের গর্ভে জমজ বাচ্চা আছে তাদের পেট স্বাভাবিক ভাবেই যাদের পেটে একটি বাচ্চা তাদের তুলনায় বড় হবে। ৪) উচ্চতাঃ যেসকল মায়েরা উচ্চতায় খাটো তাদের পেট তুলনামূলক ভাবে বড় দেখায় । ৫) যাদের ওজন বেশি বা পেট বড়, তাদের পেটে সাধারণত পেটে চর্বি থাকে। যার ফলে জরায়ুর আকার সামান্য বড় হলেই পেট বড় দেখায়। বিষয়টা এমন না যে তার গর্ভের সন্তান বেশি বড় হচ্ছে, তার সন্তান হয়তো স্বাভাবিক ভাবেই বড় হচ্ছে কিন্তু তার পেটের চর্বির কারনে পেট তুলনা মূলক বড় দেখাচ্ছে। ৬) গর্ভবস্থায় মায়ের পেটে যদি পানির পরিমাণ বেশি থাকে তখন থাকে বলা হয় ployhydromonias. যাদের গর্ভবস্থায় পেটে বেশি পানি থাকে তাদের পেট বড় দেখাবে। গর্ভবস্থায় পেটে পানি বেশি হলে সন্তান ও মায়ের জন্যে বিপদজনক। এই রকম অবস্থাতে অবশ্যই একজন গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ৭) গর্ভবস্থায় গর্ভের সন্তান যদি অতিরিক্ত ওজন হয়ে যায় তখন স্বাভাবিক ভাবেই পেট বড় দেখাবে। বিশেষ করে যাদের ডায়বেটিস আছে তাদের বাচ্চার ওজন বেশি হয়ে যায়। এছাড়া অনেই গর্ভবস্থায় অতিরিক্ত খায় যায় ফলে মোটা হয়ে যায় ফলে পেট বড় দেখায়। ৮) কোন কোন ক্ষেত্রে যদি জরায়ুতে টিউমার সহ গর্ভধারন

গর্ভাবস্থায় পেট কখন বড় হয়? গর্ভাবস্থায় পেট ছোট হওয়ার ৫টি কারন। Read More »